বাঘারপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি : কয়েকটি বিছিন্ন ঘটনা ছাড়াই উৎসব মুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যশোরের বাঘারপাড়ায় (ইউপি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত চলে এ ভোট গ্রহণ। প্রথমবারের মতো রায়পুর ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে প্রচলিত ব্যালট পেপারেই ভোট সম্পন্ন হয়।

এদিকে উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি) সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুই সদস্য প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম (মোরগ মার্কা) ও শামসুর রহমানের (তালা মার্কা) সমর্থকদের
মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে আহতরা হলেন, মো. তুষার (২৫), খাইরুল ইসলাম (৫০) ও মিন্টু শাহ (৩৫), তোফাজ্জেল হোসেন(৪০) এবং মো. বাবলু (৫০)। এরমধ্যে মো. বাবলু সদস্য প্রার্থী আশরাফুল ইসলামের সমর্থক এবং তুষার, খাইরুল ইসলাম, মিন্টু শাহ ও তোফাজ্জেল হোসেন শামসুর রহমানের সমর্থক। বর্তমানে তাঁরা যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে, ইউনিয়নের পশ্চিম বলরামপুর সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন বাঘারপাড়া উপজেলার বলরামপুর গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে জিয়াউর রহমান এবং একই গ্রামের সোহরাব বিশ্বাসের ছেলে মো. রনি (২০)। পুলিশ এ সময় জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করে।

অন্যদিকে বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের সাইটখালী ও রাধানগর এলাকায় নৌকা ও আনারস প্রতিকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দরাজহাট ইউনিয়নে পূর্ব পাইকপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সন্ধ্যার দিকে দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে  নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৮টা থে‌কে সা‌রিবদ্ধভা‌বে প্র‌তি‌টি কে‌ন্দ্রে ভোটাররা শান্তিপূর্ণ প‌রি‌বে‌শে নিজ নিজ পছ‌ন্দের প্রার্থী‌দের ভোট দি‌তে শুরু ক‌রে। নারী-পুরুষ উভয় ভোটারদের  উপস্থিতি ছিল। এর মধ্যে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে। এখন পর্যন্ত কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রে দায়িত্বরত আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পরিদর্শন করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে রায়পুর ইউনিয়নে ইভিএমে ভোট প্রদানে কিছুটা যান্ত্রিক ত্রæটির মধ্য দিয়ে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। ফিঙ্গার না মেলা, ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়া না বোঝাসহ একাধিক সমস্যায় পড়েন ভোটাররা। যদিও এ ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

স্ব স্ব কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত ফলাফল জহুরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুজ্জামান মিন্টু নৌকা প্রতিক নিয়ে ৭ হাজার ৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব বিদ্রোহী প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতিকের বদর উদ্দীন মোল্যা পেয়েছেন ৩ হাজার ১শ’ ভোট।

এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৬’শ ৩৬ জন।
বন্দবিলা বন্দবিলা ইউনিয়নে ওয়ার্কাস পার্টি মনোনীত প্রার্থী সবদুল হোসেন
খান হাতুড়ি প্রতিক নিয়ে ৬ হাজার ১শ’ ৭০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের
মতো নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস
প্রতিকের মনিরুজ্জামান তপন ৩ হাজার ৯শ’ ৬৪ ভোট পেয়েছেন।

এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সনজীত কুমার বিশ্বাস
নৌকা প্রতিক নিয়ে ৩ হাজার ৮শ’ ৫৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে
আছেন। বন্দবিলা ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ৭শ’ ৮ জন।
রায়পুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মঞ্জুর রশিদ স্বপন আনারস প্রতিক নিয়ে ৭ হাজার ৪শ’ ৩৬ ভোট পেয়ে ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন।

তার নিকটতম  আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিল্লাল হোসেন নৌকা প্রতিক নিয়ে ৩ হাজার ৬শ’ ৮৭ ভোট পেয়েছেন। রায়পুর ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার ২শ’ ১৪ জন।

নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী
বাবলু কুমার সাহা নৌকা প্রতিক নিয়ে ৯ হাজার ৫শ’ ৮৯ ভোট পেয়ে
নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম বিদ্রোহী প্রার্থী আনরস প্রতিকের আবু তাহের আবুল সরদার পেয়েছেন ১ হাজার ৭শ’ ২৩ ভোট। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৭শ’ ৫৮ জন।

ধলগ্রাম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী রবিউল
ইসলাম নৌকা প্রতিক নিয়ে ১১ হাজার ২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত
হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব বিদ্রোহী প্রার্থী আনরস প্রতিকের

আতিয়ার রহমান সরদার পেয়েছেন ২শ’ ৭৭ ভোট। তবে নির্বাচনের দুই দিন
আগে একমাত্র প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী আতিয়ার রহমান সরদার নৌকার
প্রার্থীকে সমার্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এ ইউনিয়নে
মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ২১ জন।

দোহাকুলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু
মোতালেব তরফদার নৌকা প্রতিক নিয়ে ১০ হাজার ৫শ’ ৯৩ ভোট পেয়ে পঞ্চম বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রহুল কুদ্দুস হাতপাখা প্রতিকে পেয়েছেন ২ হাজার ৯’শ
১৭ ভোট। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৮শ’ ৯১ জন।

দরাজহাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির
হোসেন নৌকা প্রতিক নিয়ে ৪ হাজার ৯’শ ১৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত
হয়েছেন। তার নিকটতম  বিদ্রোহী প্রার্থী আনরস প্রতিকের
মোহাম্মদ আলী পেয়েছেন ৩ হাজার ৫’শ ১৯ ভোট। এ ইউনিয়নে মোট
ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৪শ’ ৬০ জন।

বাসুয়াড়ি
বাসুয়াড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী
আমিনুর রহমান সরদার নৌকা প্রতিক নিয়ে ৬ হাজার ২শ’ ৪৮ ভোট পেয়ে
নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম  ঘোড়া প্রতিকের হাফিজুর রহমান পেয়েছেন ২ হাজার ৭শ’ ৮০ ভোট। এ ইউনিয়নে মোটভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ২শ’ ৭৯ জন।

জামদিয়া
জামদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুল
ইসলাম তিব্বত নৌকা প্রতিক নিয়ে ৮ হাজার ৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত
হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আনারস প্রতিকের এফএম
আসলাম হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৮শ’ ৬২ ভোট। এ ইউনিয়নে মোট
ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৯শ’ ৭৫ জন।